চায়ের এপিঠ-ওপিঠ

প্রথম প্রকাশঃ ডিসেম্বর ৯, ২০১৫ সময়ঃ ১২:৩২ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:০৩ পূর্বাহ্ণ

Tea

গল্পে বা আড্ডায় চা না হলে কি চলে?  বাঙালি আর তার চা; এদুয়ের এক অপূর্ব সম্মিলন আমরা বরাবরের মতো দেখতে পাই। কেউ চা ছাড়া সকালটা ভাবতেই পারেন না। আবার কেউ চা দেখলে কপাল কুঁচকে বলেন, চা খেলে ত্বক কালো হয়ে যায়। এ নিয়ে আমাদের বাঙালি সমাজে গল্পের যেন শেষ নেই। তবে সত্যিই কি চা খেলে আমাদের ক্ষতি হয়? 

গ্রিন টি/সবুজ চাঃ
ফিগার ঠিক রাখতে অনেকেই গ্রীন টি-এর প্রতি বেশি ঝুঁকছেন৷ গ্রীন টি প্রথমে ছিলো ওষুধ তারপর পানীয়তে পরিণত হয়েছে৷ এই চা কেবল পিপাসাই মেটায় না দূর করে ক্লান্তিও৷ জাপানের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দিনে দুই কাপের বেশি গ্রীন টি পান করেন তারা মানসিকভাবে অনেক বেশি প্রফুল্ল থাকেন৷ সবুজ চায়ে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, ই, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ছাড়াও বিভিন্ন খনিজ উপাদান যা প্রতিটি মানুষের শরীরেই প্রয়োজন৷ নিয়মিত সবুজ চা পান করলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিও কিছুটা কমে যায় ৷

আরও কিছু উপকারিতা:
১. কিডনি রোগের জন্য উপকারী।
২. হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।
৩. পোকামাকড় কামড়ালে যদি ঐ স্থান চুলকায় ও ফুলে যায় তাহলে সবুজ চায়ের পাতা দিয়ে ঢেকে দিলে আরাম বোধ হয়।
৪. রক্তে কোলেস্টোরলের মাত্রা কমায়।
৫. ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী।
৬. এর লিকার দাঁতের ক্ষয়রোধ ও মাড়ি শক্ত করে।
৭. কাটা জায়গায় গ্রিন টির লিকার লাগালে রক্ত পড়া বন্ধ হয়।
৮. নিয়মিত চা পানে রক্ত চলাচল ভাল হয়৷
৯. পেট পরিষ্কার রাখে আর মস্তিষ্ককে রাখে সচল ৷

আদা চাঃ
আদা চা খুবই উপকারী। বিশেষ করে সর্দি-কাশির ক্ষেত্রে এটি ওষুধের বিকল্প হিসেবে কাজ করে। এছাড়া

১. বমি ভাব দূর করে।
২. গরম আদা চা পান করলে গলাব্যথা কমে যায়।
৩. এসিডিটির বিরুদ্ধেও আদা চা কাজ করে।
৪. আদা চা পান করলে হজমের সমস্যা কমে।

দুধ চাঃ
ক্লান্তিতে খুবই কার্যকর। নিয়মিত চা ও কফি পানে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। চা বা কফি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ৫ গুণ কমিয়ে দেয়। এছাড়া এ সময় স্ট্রোকের কারণে মৃত্যুর ঝুঁকিও বাড়ে না বলে এক গবেষণায় দেখা গেছে।

চা সম্পর্কে ভুল ধারণাঃ

চা সম্পর্কে আমাদের অনেকের ভুল ধারণা আছে। যেমনঃ চা খেলে রাতে ঘুম আসে না, চা লিভারের ক্ষতি করে, চা চামড়া কালো করে ইত্যাদি। যদিও চা খেলে গায়ের রং কালো হবে না। কারণ ত্বকের রঙ নির্ভর করে ম্যালানোসাইট কোষের সক্রিয়তার উপর।  চা পান করলে লিভারের কোন ক্ষতি হয় না । তবে এটা মনে রাখতে হবে যে, অতিরিক্ত চা পান করলে বিপরীত প্রতিক্রিয়া হবে। যেমনঃ অবসাদ আসতে পারে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।

সঠিক সময়ে চা পানঃ
আমরা  সকালের নাস্তা বা দুপুরের খাবারের পরেও চা বা কফি পান করি।  অনেকেরই এটা প্রতিদিনের অভ্যাস। কেননা চা, কফি পান করার অনেক উপকারিতা রয়েছে। তবে এই অভ্যাস স্বাস্থ্যসম্মত নয়।

সঠিক সময়ে বা উপায়ে চা পান না করলে তা শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটায়। উপকারিতার পাশাপাশি শরীরে অন্য খাবারগুলো থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া থেকে বঞ্চিত এবং হজমে বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে। খাবার খাওয়ার আগে চা পান করলেও হজম বাধাগ্রস্থ হয় যাতে খাবার থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া যায় না। খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চা পান করা উচিত নয়। এতে বিভিন্ন ক্ষতি হতে পারে।  যেমন: 

১. খাবারের মধ্যে যে আয়রন থাকে; চা খেলে এর কার্যকারীতা নষ্ট হয়ে যায়। কারণ চা বা কফিতে রয়েছে পলিফেনন জেস্টানিন নামক উপাদান যা  আয়রন  শোষণ করে ।

২. চা শরীরে থায়ামিন বা ভিটামিন বি শোষণ রোধ করে যা  বেরিবেরি রোগের অন্যতম কারণ।

৩. চা খাবার থেকে আমিষ ও ভিটামিন শোষণ করে এবং শরীর এই খাবারগুলোকে হজম করতে পারে না।

৪. চা এর মধ্যে অ্যাসিডাম টেনিকামস্ ও জেসথিয়োফিলিন নামক উপাদান রয়েছে যা পাকস্থলীর হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত করে। 

কখন চা পান করবেনঃ
কিছু নিয়ম মেনে চললে চা পানের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। যেমনঃ

১. খাবার খাওয়ার অন্তত আধা ঘণ্টা আগে অথবা খাবার খাওয়ার এক ঘণ্টা পরে চা পান করা।

২. সকাল, দুপুর এবং রাতের খাবারের ১ থেকে ২ ঘণ্টা পরে চা বা কফি পান করা।

৩. রক্তশূন্যতা যাদের আছে তাদের উচিত সময় বুঝে খাওয়া।

৪. যাদের হজমে ও গ্রেসটিকের  সমস্যা রয়েছে তাদেরও এই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

 

 

প্রতিক্ষণ/এডি/এফটি

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

সর্বাধিক পঠিত

20G